পুজো আসছে

আজকের লেখা: পুজো আসছে 

Bangla Kobita



একবছর পরে, মহালয়া, সারা বিশ্ব যেন আজ এই ভোরের বেলায় জাগ্রত।মহিষাসুরমর্দ্দিনীর পাঠ করে চলেছেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। এই পুণ্য তিথিতে, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র- র কন্ঠস্বর যেন, গঙ্গার এপার হতে ওপার সর্বত্রই বিরাজমান, শহর যেন আজ আরও অনেকটা আরোগ্য লাভ করতে পেরেছে, সেই সঙ্গে দেবী দূর্গার আগমনী বার্তা পেয়ে যেন , কাশ ফুল থেকে শুরু করে আকাশের নীল-সাদা মেঘের দল সকলে মিলে মা-কে বরণ করে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছে। ভোর চারটের এলার্মটা যখন বাজলো, আমি তখন জেগে আছি, বারান্দার পাশে বসে দেখছি, আকাশের রং-টা কয়েক মুহূর্ত অন্তরই যেন পরিবর্তিত হতে থাকছে। রাতের চাদর ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে পাড়াটার ওপর থেকে, ক্লাবের সদস্যদের কৃপায় বেশ জোড়েই মাইকে বাজছে, মহিষাসুরমর্দ্দিনী।
এমনই মনোরম ভাবে শুরু হয়, মহালয়ার ভোর।
বাঙালি জাতি, ভাষা, সংস্কৃতির মেলবন্ধনে মা দূর্গার
আগমনীর সুর যেন মহালয়ার এই শুভক্ষণে এক অনন্য অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।

'শুভ' শব্দটার অর্থ যেন প্রকৃতি এই সময়ের রূপে, রসে, রঙে মিলিয়ে দিয়ে যায়। প্রকৃতির এই অপূর্ব রূপ দেখে মনের সমস্ত আঙিনা জুড়ে যেন শিউলি ফুল ছড়িয়ে পড়ে। ব্যস্ত জীবনের প্রতিটি বাঁকে যেন এক অদ্ভুত শান্তি।
শহরের প্রতিটা অলি-গলি থেকে আরম্ভ করে ট্রামলাইন, উত্তর কলকাতার ভেঙে যাওয়া বাড়ি থেকে দক্ষিণের বিল্ডিং কমপ্লেক্স, বাড়ির ছাদের শখের বাগান থেকে শুরু করে মধ্য কলকাতার ময়দান, প্রথম দেখা করতে আসা থেকে আরম্ভ করে পঁচিশতম বার্ষিকী পালন করা দম্পতি গোটা বাংলার সকলেই এই একটি উৎসব, বাঙালির প্রাণের উৎসব 'শারদীয়া'-পালনে যেন সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে। শিউলি ফুলের গন্ধে, মহালয়ায় দেবীর আগমনী বার্তা , বাঙালিকে আবারও এই মহামিলনের উৎসবে গা ভাসাতে আহ্বান জানায়।

নতুন জামার গন্ধ, নতুন প্রেম আর দুর্গা পুজো, পড়ার সিলেবাসের আবছা একটা অবয়ব মনের কোনো একটি কোণে হয়তো বা রয়ে যায়, তবে মা-এর পরশে জীবনের সবটুকু দুঃখ যেন সেই সময়ে বিসর্জন হয়ে যায়।

©মাম্পি মল্লিক

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ