শৈশব

বাংলা গল্প: শৈশব

বাংলা গল্প শৈশব


বছর শেষের পথে, শীতটা বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে, খুকু অফিসের সাপ্তাহিক ছুটিতে বসে আছে জানালার পাশে।জানালার পাশটা তার বরাবরই খুব পছন্দের, দুপুর থেকেই পশ্চিমী রোদ্দুরটা এসে পড়ে ঘরের অনেকটা অংশে।এই জানালা দিয়েই দেখা যায়, তাঁর বাড়ির সামনের রাস্তাটা,পাড়ার গলির একটা অংশ।খুকুর সারা সপ্তাহের খাটুনি,আর সপ্তাহের শেষের একটা দিনের ছুটিতে এইটুকু সময়ই খুকু নিজের জন্য খুঁজে পায়। যখন সে শুধু নিজের জন্যই নিজেকে রাখে।এই এত্ত বড়ো একটা পৃথিবীতে খুকুর আর কেউই নেই,যাকে সে নিজের 'শেষ সম্বল' বা 'পিছুটান' বলতে পারে।বছর পঁচিশের একটা মেয়ে যে খুকু, সেটা তাঁকে দেখে আন্দাজ করাটা খুব কঠিন।জীবনের কাঠিন্য যেন তাঁর যৌবনকে হত্যা করে ফেলেছে। মনের কথা খুলে বলতে সে আগাগোড়াই কিছুটা অপারগ, আর এখন সেই সুযোগটাও তাঁর নেই। দু'তলার এই পোড়ো একটা বাড়িতে সে একাই দিনযাপন করছে।


আসলে, প্রতি রবিবারই বিশেষত দুপুরে সে জানালার পাশে বসে থাকে,আজ তাঁর মনে পড়ছে ছোটো বেলার স্মৃতি। এইরকমই শীতের সময়ে পাড়ার বন্ধুরা মিলে দুপুর তিনটের মধ্যেই ব্যাট মিন্টন খেলার প্রস্তুতি নিয়ে বেড়িয়ে পড়তো। খেলতে খেলতে কখন যে সূর্যাস্ত হয়ে যেত খেয়ালই থাকতো না, তারপর এক এক করে ডাক পড়তো সকলের বাড়ি থেকে, ঠিক যেমন পাখিরা বাসায় ফেরে সারা আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে , একইভাবে তাঁরাও যে যার বাড়ি ফিরে যেত।খুকুর চোখের কোলে জল গড়িয়ে আসে,দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ মুছে ফেলে সে।

আসলে ছোটবেলা বিষয়টা ভীষণই মায়ার, শৈশবকে টুকরো টুকরো করে যদি জীবনের একটা একটা অধ্যায়ের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া যেত তবে হয়তো বেশ হতো।সময়ের হাতছানিতে হারিয়ে যেত না শৈশব।।


©মাম্পি মল্লিক



শীত-কাতুরে

সময়ের মত করে


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ